সাখাওয়াত হোসাইনঃ
আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি ইউনিফর্ম পরিধান করে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর যোগসাজশে ০৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলে নিতে জোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা।
উখিয়া উপজেলাস্থ ইনানীর নিদানিয়া এলাকায় গত কয়েকমাস ধরে সশস্ত্র মহড়া চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ভীতিকর পরিবেশে এসব জমি দখলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তারা আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি ইউনিফর্ম পরিধান করে সশস্ত্র সন্রাসী দুর্ধর্ষ কালা জমির বাহিনীর সহযোগিতায় দিনে রাতে দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উখিয়ার ইনানীতে নিদানিয়া এলাকায় “ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স” কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ তহবিল এর সভাপতির নামে
০৩ (তিন) একর জমি ক্রয় করা হয়। অথচ বন্টন নামা অনুযায়ী বিক্রেতারা তার অর্ধেকেরও কম অংশের মালিক।
অভিযোগ রয়েছে এই ০৩ একর জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা যোগসাজশে নানা ধরনের জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুঁয়া দলিলপত্র তৈরি করে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উক্ত দাগ-খতিয়ানের ০৮ একর জমির পৈতৃক সূত্রে প্রকৃত মালিক আব্দু জলিল, আবদুল মতলব, মক্তুল হোসেন, মৌলভী আব্দুল গনি, আমির হোসেন ও কাদির হোসেন।
এই ছয় জন মালিকের মৃত্যুর পরে তাদের ওয়ারিশগনই বর্তমানে উক্ত জমি ভোগ দখলে রয়েছেন।
কিন্তু এদের মধ্যে শুধু আমির হোসেনের ওয়ারিশরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর কল্যাণ তহবিলের সভাপতির কাছে জমি বিক্রি করেছেন। এবং
বন্ঠন অনুযায়ী প্রাপ্ত অংশের কয়েকগুণ বেশি জমি(৩ একর)গোপনে উভয় পক্ষ যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। যার ফলে ফায়ার সার্ভিস পুরো ৮ একর জমি দখলে নিতে চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ সহ নানা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে ও উক্ত জমির অংশীদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ৩০ বছর ধরে পৈতৃক জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে চতুর্মুখী বিরোধ চলে আসছিলো।যার ফলে দখল-বেদখলের বিষয় নিয়ে অন্তত ৩০ বার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
জমির মালিক আমির হোসেনের ওয়ারিশগন প্রভাবশালী হওয়ায় তারা সম্পত্তির অতিরিক্ত অংশ দখলে রাখায় অন্যান্য ওয়ারিশদের সাথে বিরোধ লেগেই থাকতো।
মূলতঃ এসব বিরোধের সুযোগ নিয়ে এলাকার ত্রাস দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী জমির বাহিনীর প্রধান জমিরের সহযোগিতায় আদালতের আদেশকে অগ্রাহ্য করে পুরো ০৮ একর জমিতে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা।
অধিকাংশ ওয়ারিশদের অভিযোগ, মোট ০৮ একর জমিতে ৬ ভাইয়ের সমান অংশ থাকলেও শুধুমাত্র এক ভাই আমির হোসেনের ওয়ারিশগন নানা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এককভাবে ৩ একর জমি বিক্রি করে দেন। যা ভুমি আইন বা সম্পত্তি বন্টন আইনের পরিপন্থি।
তাছাড়া, উক্ত এলাকায় প্রতি ৪০ শতক জমির বাজার মূল্য তিন কোটি টাকা। পক্ষান্তরে ফায়ার সার্ভিসের দলীলে প্রতি ৪০ শতক জমির মূল্য লেখা হয়েছে এক কোটি বিশ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও আমির হোসেন গং যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া অন্যান্য ওশারিশদের জমির মূল্য নিয়েছেন মাত্র ৪০ লাখ টাকা(যার সব টাকা আত্মসাত করে আমির হোসেন গং)।
শুধু তাই নয়, ৬ ভাইয়ের ওয়ারীশদের এজমালি সম্পত্তি শুধু এক ভাইয়ের ওয়ারিশদের কাছ থেকে ক্রয় করে দলীলে প্রতিটি দাগ বসিয়ে দেয়া হয়।
এভাবেই প্রতারনার মাধ্যমে মোট ৮ একর জমির চারিপাশে জমি কিনেছে দাবী করে প্রতি দাগ থেকে জমি নেয়ার হুমকি দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসী কায়দায় পুরো জমির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পাশাপাশি ভাড়াটিয়া কালা জমির বাহিনীর সশস্ত্র পাহারায় দখল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি জমির মালিক অপর ৫ ভাইয়ের ওয়ারিশগন দখল কার্যক্রমে বাধা দিলে তাদের উপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও জমির বাহিনীর লোকজন হামলা চালিয়ে দুই নারীসহ ৭ জনকে গুরুতর আহত করে।
এবিষয়ে উক্ত জমির ৩ (তিন)একরের ক্রয়কৃত মালিক শহিদ উল্লাহ জানান – তিনি আমির হোসেনের ওয়ারিশ এবং আব্দুল মতলবের ওয়ারিশদের কাছ থেকে ৩ একর জমি ৫ বছর আগে ক্রয় করে ভোগ দখলে রয়েছে। কিন্ত এইসব বিষয় জানা সত্বেও ফায়ার সার্ভিস কল্যাণ তহবিলের ক্রয় কর্তারা উক্ত বিক্রিত জমি দ্বিতীয়বারের মতো কিভাবে ক্রয় করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানালেও তিনি তা আমলে না নিয়ে ক্ষমতার জোর খাটিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কিভাবে জনসাধারণের জমি জবল দখল করলেন তা নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শহীদ উল্লাহ আরও জানান, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট(এডিএম) এর আদালত ১৪৪ ধারার আদেশ দেন। আদেশ মতে উক্ত জমিতে কোন প্রকার দখল কার্যক্রম বা স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তা অমান্য করে কোন্ ক্ষমতার বলে দখল কার্যক্রম চলমান রেখেছে তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।।
এদিকে আব্দুল জলিল ও মকতুল হোসেন এর ওয়ারিশরা জানান – তাদেরকে উক্ত জমিতে যেতে নিষেধ করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, নিজের জমিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিবারের লোকজনের উপর হামলা করে কয়েকজনকে গুরুতর আহতও করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে তাদের জমি দখলে নিয়ে তাদের জিম্মি করে রেখেছে বলেও জানান তারা।
জমির অন্যান্য ওয়ারশিগন জানান, এসব বিষয় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র মহাপরিচালকের সাথে দেখা করে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকৃত মালিকরা।
তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার বুলবুল কে দায়িত্ব দেন।
পরে বুলবুল ঘটনার সত্যতা পেয়ে অপর ৫ ভাইয়ের ৪০ জন ওয়ারিশের কাছ থেকে নাম মাত্র মূল্যে জমি ক্রয়ের প্রস্তাব দিলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা নিজেদের জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানান।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে হুমকি ধমকি দেন।
পরবর্তীতে নিজেদের জমি রক্ষায় ওয়ারিশগন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)এর আদালতে এমআর মামলা দায়ের করলে, আদালত উক্ত জমিতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারী করেন।
কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার বুলবুল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কক্সবাজারের পরিচালক অতিশ চাকমা এবং ফিল্ড কর্মকর্তা মামুনের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কালা জমিরের সশস্ত্র বাহিনী জোর পূর্বক বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও পিলার বসানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়াও উক্ত জমির মাঝে স্থানীয় শহিদ উল্লাহর ও তার স্ত্রী এবং শহিদ উল্লাহর কোম্পানির নামে ভিবিন্ন দাগে ২ একর ২০ শতক ক্রয় জমি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ক্ষমতার জোরে এই জমিও তাদের বাউন্ডারিতে ঘিয়ে ফেলে। একাধিকবার অভিযোগ করে তিনিও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান শহিদুল্লাহ।
স্থানীয় জনসাধারণের জমি জবর দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর পরিচালক অতিশ চাকমার মুঠোফোনে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় কক্সবাজার পেট্রোল পাম্প এলাকাস্থ ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে কয়েকবার খোঁজ করা হলে অফিসে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার বুলবুলের মুঠোফোনেও একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কথা না বলায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে স্থানীয়দের জমি জবর দখলের বিষয় নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো ইনানী এলাকাজুড়ে। অবিলম্বে বিষয়টির সুষ্ঠ নিষ্পত্তি করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসীরা।