বিশেষ প্রতিবেদক:
হোসাইন আল মাসুম নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গেল ৩০ মে হোসাইন আল মাসুমকে বনশ্রী এলাকা থেকে অপহরণ করেন তার পরিচিত কয়েকজন ব্যবসায়ী। পরদিন ৩১ মে তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার সীমা ঢাকা খিলগাঁও থানায় নিখোজ ডায়েরি করেন। ওইদিন মাসুম অপহরনকারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। ১ জুন তাকে মুন্সিগঞ্জ নিয়ে গিয়ে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন ২ জুন তাকে হাতিরঝিল থানায় নিয়ে গিয়ে মিথ্যা প্রতারণা মামলার আসামী বানিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ৪ জুলাই আদালত থেকে জামিনে বের হন হোসাইন আল মাসুম।
মাসুমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। যার মামলা নং ৩২৮/২৩। মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।
হোসাইন আল মাসুম কক্সবাজার কুতুবদিয়া উপজেলার মাতবর পাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসাইনের ছেলে। বর্তমানে সে ঢাকার বারিধারা এলাকায় গাড়ির ব্যবসা পরিচালনা করেন। এবং বনশ্রী এফ ব্লকের ৬নং রোডের ২২নং বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, গেল ৩০ মে রাত এগারোটার দিকে হোসাইন আল মাসুম তার ঢাকার বাসার কাছে ফরায়েজী হাসপাতাল থেকে তার সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীর মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে ফেরার পথে তার ব্যবসায়ীক পরিচিত মোঃ শামিম রহমানের দেখা হয়। এরপর সেখানে তাপসী নামের এক তরুণী আসে যাকে শামিম তার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মাসুম দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। অল্প কিছুদূর এগোতেই একটি নিশান এক্সট্রেইল এবং টয়োটা এক্স করোল্লা গাড়ি তার পথরোধ করে। মাসুমকে আশ্চর্য করে দিয়ে গাড়িগুলোর একটি থেকে বেরিয়ে প্রথমে শামিম তার সামনে আসে। এরপর শামিমের নেতৃত্বে তাপসী, অপু, রিমা, হান্নান ও বাবুসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক অপহরণ করে।
এই বিষয়ে মাসুম বলেন, তাঁরা আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে উঠায় এবং চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর আমার চোখ আর মুখ বেধে ফেলা হয়। তারপর আমাকে শামিমের নিকেতনের অফিসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মামলার ২নং আসামী ইফতেখার উদ্দিন টুটুল আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায় এবং এই সুজোগে তাপসী আমার দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ও নগদ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। এরপর আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
মাসুম বলেন, এর কিছুক্ষণ পর শামিম আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবী করে। আমি অস্বীকৃতি জানালে আমাকে আবারও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আমি আর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এবং জীবনের ভয়ে তাদের কথায় রাজী হই। এরই মধ্যে তারা আমাকে কতগুলো খালি স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে সই করায়। এরপর আমাকে আমার ফোনটা হাতে দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন আমি টাকার বিষয়ে আমার পরিচিত বড় ভাই মোঃ ফরহাদ রেজাকে জানাই। সে অনুযায়ী তিনি পরদিন অর্থাৎ ৩১ মে সকালে তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে শামিমের একাউন্টে ৫ লাখ টাকা পাঠান। কিন্তু তারা আরও টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমার স্ত্রী আমাকে নানা জায়গায় খোজাখুজি করে না পেয়ে ৩১ তারিখেই খিলগাও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে (জিডি নং-২৫১০)। এই বিষয়টি টের পেয়ে শামিম, টুটুল এবং তাদের লোকেরা আমাকে নিকেতন থেকে মুন্সিগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে অনেক মারধর করে। এরপর তারা আমাকে ২ জুন হাতিরঝিল থানায় এনে একটি বানোয়াট প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার করিয়ে দেয়। এই মামলায় আমি এক মাসের বেশী জেল খেটে ৪ জুলাই বের হই। এরই মাঝে ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তবে নিজেকে গুছিয়ে এখন ন্যায়বিচার পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছি। ইতোমধ্যে আদালত আমার মামলাটির দায়ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে দিয়েছে।