নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ষার শেষলগ্নে কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণ অব‍্যাহত রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে পৃথক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনায় কক্সবাজারে সদর ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন ও শহরের হালিমারঘোনায় ১ জন। অন্যদিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১৪ নম্বরের হাকিমপাড়ায় পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ তিনজনের প্রাণ গেছে।

১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল, শহরের হালিমারঘোনা ও উখিয়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- দক্ষিণ ডিককুলের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি আকতার (২৫) এবং তার দুই শিশু কন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম এবং হালিমারঘোনার জাহেদ (৭)। রোহিঙ্গা শিবিরে নিহতরা হলেন- ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম (৩০) আব্দুল হাফেজ (১০) ও আব্দুল ওয়াহেদ (৮)।

নিহতের স্বজনরা জানান, ভারী বর্ষণের কারণে গভীর রাতে মিজানের বাড়ির ওপর পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও তার স্ত্রী ও দুই সন্তান মাটি চাপা পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় তাদের মরদেহ বের করে আনা হয়।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার দোলন আচার্য বলেন, সদরে তিনজনের মরদেহ বের করে আনা হয়েছে।

ডিককুলে পাহাড় ধসে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুল করিম সিকদার জানান, রাত ২টার দিকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সময় মিজানের বাড়ির দিক থেকে একটি পাহাড় ধসের বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। পরে গিয়ে দেখেন মাটিচাপা পড়েছে মিজানের পরিবার। তাৎক্ষণিক মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আজ (শুক্রবার) ভোররাতের দিকে কক্সবাজার দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশু মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও জানান, মিজানের বাড়িটি পাহাড়ের পাদদেশে। বৃহস্পতিবার বিকালে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে ওপর থেকে পাহাড় ধসে তার বাড়িতে পড়ে।

অপরদিকে রাতে উখিয়ার হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ব্লক ই-২ তে পাহাড় ধসে দুই শিশুসহ তিনজন নিহত হন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ভারী বর্ষণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল নয়টা থেকে আজ (শুক্রবার) সকাল নয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৪০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে (২০২৪) এটি (এক দিনে) সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে কখনো কখনো ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ভারী বর্ষণে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলা শহর সহ বেশ কিছু গ্রামে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে অনেকের বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকায় জনজীবনে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *