“মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প যেন দুর্নীতিবাজদের আলাদিনের চেরাগের মতোই”
#অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-২
উপকূলীয় প্রতিনিধি
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প যেন দুর্নীতিবাজদের আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতোই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা ও অবৈধ সম্পদ গড়েছে এক যুবলীগ নেতা ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা।
নাম তার আশেক মাহমুদ। মগডেইলের বাসিন্দা। বেশ কয়েকবছর আগেও নুন আনতে পান্তা শেষ। সেই আশেক মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর মদদে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতোই গড়েছে সম্পদের পাহাড়। হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক।
মাত্র ৭ বছরে ব্যবধানে এই সাবেক চেয়ারম্যান বদৌলতে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা ও অবৈধ সম্পদ গড়েছে যুবলীগ নেতা আশেকসহ তার স্বজনরা।
এছাড়াও মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ নিজের নামে ব্যবসা বাণিজ্য না করে তার আপন ভাগিনা আশিক মাহমুদের নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্য, অধিগ্রহণে ঘুষ, টেন্ডার ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং তার আত্মীয় স্বজনের তেমন সহায় সম্বল ছিল না। তার ভাগিনা আশিক মাহমুদের নুন আনতে পান্তা শেষ এমন ভাবেই সংসার চলছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ চেয়ারম্যান পদে লড়লে গরীবের সহানুভূতি নিয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপরই কপাল খুলে চেয়ারম্যানসহ তার ভাগিনা আশেকের। সকলের দৃষ্টি আড়াল করতেই আশিক মাহমুদের মাধ্যমে নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে ও প্রকল্পের কর্মকর্তা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠে মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ফিরোজ, এস্তেফাজুর রহমান, শাহাজাহান সহ অনেকে বলেন- আওয়ামী যুবলীগের নাম ব্যবহার করে আশিক মাহমুদসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রকল্প শুরুতে তাদের কি ছিল? বর্তমানে কত টাকার মালিক হয়েছে? আর কি পরিমাণ টাকা লুটপাট করেছে তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
এদিকে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে ও অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকুলে জব্দ করা জরুরী বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন নাগরিক। অবৈধ টাকার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে যুবলীগ নেতা আশেক মাহমুদ। জড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর একজন সাবেক কর্মচারী বলেন- চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বিভিন্ন জনকে চাকুরী ও ব্যবসা বাণিজ্য দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এছাড়াও তার ভাগিনা আশিক মাহমুদের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য করে তিনি লাখ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেন বলেও জানান।
এবিষয়ে আশিক মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার মামা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে প্রকল্পে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ পেলেও কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা পয়সা আয় করেনি বলে জানান এবং তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে এডিয়ে যান।
এবিষয়ে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
