নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রশাসনের সোর্স পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ধর্ষণ, মাদক, ডাকাতি সহ অন্তত ডজন মামলার আসামি জলদস্যু ও এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত ওমর ফারুক প্রকাশ ফারুক মাঝি এবং তার এক সহযোগী র্যাবের জালে আটক। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) দিবাগত রাতে কক্সবাজার পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কুতুববাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়ার মৃত জামাল উদ্দীনের ছেলে ওমর ফারুক প্রকাশ ফারুক মাঝি ও একই এলাকার মৃত সৈয়দ আহমদের ছেলে মো: নুর মোহাম্মদ মেহেদী।
র্যাব সূত্রে জানাযায়- গতকাল ১৭ জানুয়ারী দিবাগত রাত ৩টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কুতুব বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফারুক ও মেহেদীকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একনলা একটি কসটা বন্ধুক, একশত দুইগ্রাম ইয়াবা ট্যাবলেট, ২টি এনড্রয়েড মোবাইল, ২টি বাটন মোবাইল ও কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানা যায়।
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড সহ পুরো শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াতেন এ ফারুক। বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এক কথায় তাকে ১নং ওয়ার্ড তথা পৌর শহরের সকল অপরাধীদের লিডার বললেই চলে। পৌর ১নং ওয়ার্ড সহ পুরো শহর জুড়ে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামীদের নিয়ে গঠন করেছে একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে মহিলাও রয়েছে। ইয়াবা ফারুক নিজের নির্দেশনায় তার গঠিত বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ইয়াবা পাচার, মাদকের আসর, অস্ত্র পাচার সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যেতেন। সে প্রভাশালী হওয়ায় তার অপকর্ম নিরবে সহ্য করছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফ্যাসিষ্ট সরকারের প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ার পাশাপাশি স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ জন হওয়ায় তার অপকর্ম থামানো যাচ্ছিলনা। একসময়ের বিভিন্ন মাছ ধরার টলারে জেলের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা ফারুক মাঝি এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। প্রায় অনুষ্ঠানে জায়গা নেয় সম্মুখ সারিতে। ফারুক মাঝি সমুদ্রে মাছ ধরার সুবাধে জলদস্যুদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে জড়িয়ে পড়ে জলদস্যুতায় এক সময় বনে যায় জলদস্যুদের প্রধান। তখন থেকে নিজ নেতৃত্বে পরিচালিত হয় সাগরে জলদস্যুতা।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন- সে জলদস্যুতার সুবাধে পরিচয় হয় এক রোহিঙ্গা বোট মাঝির সাথে। সেই পরিচয়ে আর পিছনে তাকাতে হয়নি ফারুক মাঝিকে। ওই রোহিঙ্গা মাঝির মাধ্যমে পৌর ১নং ওয়ার্ডের নাজিরারটেকের জিরো পয়েন্ট ব্যবহার করে ফারুক মাঝি নিয়মিত ফিশিং ট্রলারের মাধ্যমে ইয়াবা খালাস করে দেশে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। বনে যায় টাকা ওয়ালা। এরই মাঝে ইয়াবা, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বেশ কয়েকটি মামলার মালিক হয়ে যায় ফারুক মাঝি।
১নং ওয়ার্ড এর কুতুববাজারের ভাড়াটিয়া এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত যার মামলা নং- কক্সবাজার সদর থানায় এফ আই আর নং-২৮/২৮ তারিখ-১০ জানুয়ারী ২০২২ জি আর-২৮, ধারা -৯(১)২০০০ সালের নারী ও শিশু দমন আইন সংশোধনী ২০০৩। পাশাপাশি কক্সবাজার সদর থানার ২০১৮ সালের ৭২/১০৯০ তারিখ-১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ধারা-৪৩৬-৪২৭-৫০৬-৩৪ মামলার আসামি এবং চট্রগ্রামে চকবাজার থানায় মাদক মামলায় অভিযুক্ত আসামী, যার মামলা নং- চট্রগ্রামের চকবাজার থানায়, ৯/৯১ তারিখ-১৯ আগষ্ট ২০১৭ ধারা -১৯ (১) এর ৯ (খ) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজী সহ এমন কোন কাজ নেই যা সে নিয়ন্ত্রণ করছে না।
এলাকাবাসী জানায়- পুরো ১নং ওয়ার্ড এর অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্র ও মাদক ব্যবসার মহাজন এই ফারুক মাঝি।
তারা আরও জানান- বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের সাথেও ছিলা তার সখ্যতা। সে ১নং ওয়ার্ড সহ পুরা কক্সবাজার শহরে মাদক-অস্ত্র সাপ্লাইয়ারের কাজ করতো আওয়ামী লীগের সরকার পতন হওয়ার পর সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এলাকায় র্যাব, পুলিশের সোর্স পরিচয়ে অস্ত্র-মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অনেক অসহায়কে মিথ্যা মামলায় আসামি বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া ফারুক মাঝির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে কিংবা কেউ তার বিরুদ্ধে দাড়ালে ফারুক মাঝি পুলিশের সাথে আতাত করে ধ্বংস করে দেয় তাদের ভবিষ্যৎ।
অদৃশ্য শক্তির কারণে ফারুক মাঝির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। কিন্তু পাপ ছাড়েনা বাপকে, অবশেষে অথিতের ন্যায় অপরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন অস্ত্র ব্যবসায়ী ইয়াবা সম্রাট ফারুক। তার আটকের খবর এলাকায় প্রচার হলে খুশিতেই অনেকেই মিষ্টি বিতরণ করেন।