সংবাদ পরিবেশক
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়া লম্বাঘোনার লবণ চাষীদের উপর লক্ষ করে ব্যাপক গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারী) দুপুরে পেকুয়ার দূর্গম ও বিচ্ছিন্নদ্বীপ করিয়ারদিয়ার মাঝের চর লম্বাঘোনায় লবণ চাষীদের ওপর মহেশখালীর আখতারুজ্জামান বাবুর নেতৃত্বে তার বাহিনীর ২০/২৫ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা উপর্যপুরি গুলি বর্ষণ করলে এতে ১১ ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়।
ঘটনাস্থল থেকে পেকুয়া থানা পুলিশ বাবু বাহিনীর এক সদস্যকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তি মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড়ের বাংলা বাজার এলাকার মো.হোসেনের ছেলে সাদেক হোসেন খোকা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পেকুয়া থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়- বাবু বাহিনীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ১০/১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে লবণ চাষীদের উপর হামলা চালিয়েছে।
হামলায় আহতরা হলো- বদরখালীর ৪নং ওয়ার্ড়ের শাহ আলমের ছেলে নাসির উদ্দিন, বদরখালীর ২নং ওয়ার্ড়ের মগনামা পাড়ার মরহুম আলী আহমদের ছেলে জসিম উদ্দিন সরকার, ছাবের আহমদের ছেলে সালাহউদ্দিন সাকা, নাপিত খালী পাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে দেলোয়ার, মাতারবাড়ীর ইউসুফ নবীর ছেলে জসিম উদ্দিন, দিলু আহমদ, আলী হাজীর ছেলে বারেক মিয়া, তালেব আলীর ছেলে জামাল উদ্দিন, হাজী সাহাব মিয়ার ছেলে বদর উদ্দিন, ফরিদ আলমের ছেলে আবদুর রহিম, লাল মিয়ার ছেলে মুরাদ, ফরিদ আলমের ছেলে নুরুন্নবী।
পেকুয়া থানা সূত্রে আরও জানা যায়- বাবু বাহিনীর বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী লবণ চাষীরা লবণ চাষ ও মৎস্য চাষে বাধাদান ও চাঁদাবাজীর অভিযোগ করলে পেকুয়া থানার এস.আই উগ্যজাই মার্মা একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা লবণ চাষীদের উপর গুলি বর্ষণ করে আতঙ্ক ছড়ায়।
লবণ চাষী ওয়াইজ উদ্দিন বলেন- কুখ্যাত অস্ত্রধারী আকতারুজ্জামান বাবু বাহিনী প্রায় ২শ একর লবণ মাঠের চাষীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে সাধারণ কৃষকদের উপর গুলি বর্ষণ করেছে।
তথ্যসূত্রে জানাগেছে, সন্ত্রাসী আখতারুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা ধর্ষণ ডাকাতি চাঁদাবাজী প্রতারণা সহ ৩৫টি মামলা চলমান রয়েছে। আনিসুল ইসলাম ছোটনের বিরুদ্ধেও হত্যা চাঁদাবাজী ডাকাতি ভোট কেন্দ্র দখল সহ বিভিন্ন অপরাধে ২০টি মামলা রয়েছে।
আখতারুজ্জামান বাবু মহেশখালী উপজেলার কালারমারছরা ইউনিয়নের উত্তর নলবিলার আফজলিয়াপাড়ার মৃত ছমির জালাল প্রকাশ কালুর ছেলে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে- সন্ত্রাসী বাবু তার ভাই আনিসুল ইসলাম ছোটন, শহিদুল ইসলাম রিপন, বোরহান উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বকুল, একই উপজেলার মাতার বাড়ীর ৩নং ওয়ার্ড়ের খোরশেদ, রাজঘাট টেকপাড়ার দেলোয়ারের সমন্বয়ে একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে দুর্গম করিয়ারদিয়া বিছাখালী, লম্বাঘোনা, মাতারবাড়ী কালামার ছরার বিভিন্ন এলাকার লবণ চাষী ও চিংড়ী প্রজেক্ট থেকে চাঁদাবাজী, লুটপাট, সাগরের ট্রলার ডাকাতি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ও মহেশখালীর সাবেক মেয়র মকসুদ মিয়ার চত্রছায়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে সাধারণ লোকদের কাছে মূর্তিমান আতংকের নামে পরিণত হন। তাদের অস্ত্রের মুখে লবণ ও মৎস্য চাষীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। যান চলাচলের এলাকা থেকে প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার অদূরের বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ অঞ্চলে বাবু বাহিনীর আস্তানা হওয়াতে পুলিশ প্রশাসন কোন প্রকার কার্যকর ভুমিকা রাখতে না পারায় বাবু বাহিনী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সাগরে ও লবণ মাঠে সমানতালে দস্যূবৃত্তি চালিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন- উজানটিয়া করিয়ারদিয়া এলাকায় লবণ চাষীদের কাছে চাঁদাদাবী করে আসছে মহেশখালী এলাকার বাবুর নামের একটি সংবদ্ধ গ্রুপ এমন অভিযোগ পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে গেলে পুলিশের সামনে বাবুর গ্রুপ চাষিদের উপর গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক ছড়ায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একজনকে আটক করে। অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করা হয়েছে। আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ সহ জরুরী ভিত্তিতে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।